গত এক বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু ৯৯৫১

গত এক বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু ৯৯৫১

গত এক বছরে দেশে ৯ হাজার ৯৫১ জন নিহত ও ১২ হাজার ৩৫৬ জন আহত হয়েছেন। একই সময় রেলপথে ৬০৬টি দুর্ঘটনায় ৫৫০ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি ২০১ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া নৌ-পথে ২৬২টি দুর্ঘটনায় ৩৫৭ জন নিহত, ৩৫৭ জন আহত এবং ৭৪৩ জন নিখোঁজ হয়েছেন।
সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সর্বমোট ৭৬১৭ টি দুর্ঘটনায় ১০৮৫৮ জন নিহত এবং ১২৮৭৫ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া রেলপথে ৫৫০ জন ও নৌপথে ৩৫৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন।

আজ সোমবার (০২ জানুয়ারি) বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের বার্ষিক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি সাগর-রুনি মিলনায়তনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী প্রতিবেদনের এসব তথ্য তুলে ধরেন।

মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানান, দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌ-পথে দুর্ঘটনার সংবাদ মনিটরিং করে প্রতি বছরের ধারাবাহিকতায় এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, সদ্য বিদায়ী ২০২২ সালে ৬৭৪৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৯৯৫১ জন নিহত, আহত হয়েছেন ১২৩৫৬ জন।

২০২১ সালের চেয়ে ২০২২ সালে সড়কে দুর্ঘটনা ১৯.৮৯ শতাংশ ও প্রাণহানি ২৭.৪৩ শতাংশ বেড়েছে। গত ০৮ বছরে নিবন্ধিত যানবাহনের পাশাপাশি ছোট যানবাহন বিশেষ করে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের সংখ্যা ৪ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি ইজিবাইক, মোটরসাইকেল ও ত্রি-হুইলার সরকারি আদেশ অমান্য করে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে অবাধে চলাচলের কারণে গত ০৮ বছরের মধ্যে বিদায়ী ২০২২ সালে সড়কে সর্বোচ্চ দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে বলে পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে।

সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ৩০৯০ চালক, ১৫০৩ পথচারী, ৭৪২ পরিবহন শ্রমিক, ৮৮৫ শিক্ষার্থী, ১৩২ শিক্ষক, ২৮৩ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১১৫০ নারী, ৭৯৪ শিশু, ৪৪ সাংবাদিক, ৩১ চিকিৎসক, ১৮ বীর মুক্তিযোদ্ধা, ০৫ শিল্পী, ৯ আইনজীবী ও ২৯ প্রকৌশলী এবং ১৬৮ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে।

এর মধ্যে নিহত হয়েছে ১১৪ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে ২৭ জন সেনা সদস্য, ৬২ জন পুলিশ সদস্য, ২ র‌্যাব সদস্য, ৯ জন বিজিবি সদস্য, ৫ জন নৌ-বাহিনীর সদস্য, ৮ জন আনসার সদস্য, ২ জন ডিজিএফআই সদস্য, একজন বিমানবাহিনীর সদস্য, একজন সিআইডি, একজন এনএসআই সদস্য, ১৬ বীর মুক্তিযোদ্ধা, ২৪ জন সাংবাদিক, ৭০৩ জন নারী, ৫৮৮ জন শিশু, ৬৬৬ জন শিক্ষার্থী, ১১৭ জন শিক্ষক, ২৩৮৩ জন চালক, ৪২১ জন পরিবহন শ্রমিক, ২৭ জন প্রকৌশলী, ০৯ জন আইনজীবী, ১৩৩ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, ৩১ জন চিকিৎসক।

এ সময়ে সংগঠিত দুর্ঘটনায় সর্বমোট ৯৬১৬টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে, যার ১৩.৯৫ শতাংশ বাস, ২৪.৫০ শতাংশ ট্রাক-পিকাপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ৬.৯৫ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস, ৬.২২ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ২৮.৫৯ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১১.৪২ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৮.৩২ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।

সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৫২.৫৫ শতাংশ পথচারীকে গাড়িচাপা দেওয়ার ঘটনা, ২১.৬১ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৫.৭৯ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ৮.৬৩ শতাংশ বিবিধ কারণে, ০.৪০ শতাংশ যানবাহনের চাকায় ওড়না পেছিয়ে এবং ০.৯৯ শতাংশ ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

পরিসংখ্যানের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিগত ২০২১ সালের তুলনায় বিদায়ী ২০২২ সালে ১.৫২ শতাংশ গাড়ি চাপা, ০.৫৬ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ০.১৩ শতাংশ যানবাহনের চাকায় ওড়না পেছিয়ে, ০.৩৪ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ার ঘটনা কমেছে। ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষের ঘটনা ০.১২ শতাংশ বেড়েছে।

২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় সংগঠিত যানবাহনের ৩.১৯ শতাংশ বাস, ৩ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২.৭৪ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক, ২.৫১ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিক্সা, ০.৭৮ শতাংশ কার-জীপ-মাইক্রোবাস দুর্ঘটনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া ৫.৯২ শতাংশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-লরি, ১.৩২ শতাংশ নসিমন-মাহিন্দ্রা-লেগুনা দুর্ঘটনা বিগত বছরের চেয়ে কমেছে।

দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে এই বছর মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ২৭.৭০ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৫২.০২ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ১১.৮৮ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। এছাড়াও সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৫.৬৭ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ১.৭১ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ০.৯৯ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংঘটিত হয়েছে।

গত বছরের চেয়ে বিদায়ী বছরে ছোট যানবাহনের সংখ্যা হঠাৎ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাওয়া ও এসব যানবাহন জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে অবাধে চলাচলের কারণে আঞ্চলিক মহাসড়কে ১২.৭৩ শতাংশ, জাতীয় মহাসড়কে ৩.৮১ শতাংশ, রেলক্রসিং-এ ০.১৬ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ফিডার রোডে ৮.৪৬ শতাংশ দুর্ঘটনা কমেছে।

২০২২ সালে, সড়ক দুর্ঘটনা সবচেয়ে বেশি সংগঠিত হয়েছে ১৫ জুলাই, এই দিনে ৩৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৩ জন নিহত ও ৯৭ জন আহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে ০৬ সেপ্টেম্বর, এই দিনে ০৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত ও ১৩ জন আহত হয়েছেন। সড়ক দুর্ঘটনায় একদিনে সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছে ২৯ জুলাই, এই দিনে ২৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৪ জন নিহত ও ৮৩ জন আহত হয়েছেন। সড়ক দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি আহত হয়েছে ১১ জুলাই, এই দিনে ২৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৭ জন নিহত ও ১২৪ জন আহত হয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *